কাল অস্মিতাকে ফোন করেছিলাম। হ্যালো-র সাথে সাথে ওপাশ থেকে যে আওয়াজটা ভেসে এল, সেটার চেয়ে বেশি চেনা আমার কাছে বোধহয় কিছুই নেই। একটা ছোট্ট হুইসল। প্রথমে বেশ জোরালো ভাবে শুরু হয়ে কখন যে মিশে যায় কুয়াশার মধ্যে!
‘কোথায়?’
‘তুই বল’ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল অস্মিতা।
‘বাতাসিয়া লুপ নাকি রে?’
‘ভাই, তুই কি দার্জিলিং এক্সপার্ট?’ বেশ অবাক হল ওপারের গলাটা।
‘আজকে জানলি?’
বাকি কথাগুলো আর শুনতে পাইনি। শুধু চোখের সামনে ভাসছিল, টুং সোনাদা ঘুম পেরিয়ে, আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে, যখন তখন পৌছে যাওয়া যায়…
নীলগিরির টয়ট্রেনে একবার চড়েছি। হুইসলটাও শুনেছি ওটার, কেন যে অনেক, অনেক আলাদা লাগে… আর এটা, এটা তো আমাদের!
দার্জিলিং, স্বপ্ন। কোনো দিনই শেষ হয় না। শেষ হয়ে গেলে আবার নতুন হয়ে ওঠে পুরনো জায়গাগুলো। বোধহয় ম্যালের ভিড়টাকেও ভালো লাগে আমার।
আর জিমখানা ক্লাব, ম্যালের স্কেটিং সু পায়ে বাচ্চারা, বাবা মা-র সাথে হেঁটে হেঁটে খুঁজে বার করা রাস্তাগুলো, Tibetan refugee centre, শৈলাবাস, সেন্ট পলস্-এর সামনের ওই ডালমেশিয়ান তিনটে, পাইনের ফাঁক দিয়ে রাস্তায় পড়া রোদ্দুরের ছোপ…. আর, পেট ভরে খাওয়ার মেঘ…..
স্টেশনের কাছে মহারানি স্কুল, লীলা মজুমদারের স্কুল। জলাপাহার রোডের শৈলাবাস। একসময় চিত্তরঞ্জন দাশেরা আসতেন যে বাড়িতে, সেটাই এখন ধংস স্তূপ। লেবং কার্ট রোডের রায় ভিলা। ভগিনী মারা গেছিলেন এখানেই, এই বাড়িটার এখন বেশ ভালোই অবস্থা, তবে পুরনো রংটাকে ঢেকে দেওয়া নতুন রংটা যেন বাড়ির হেরিটেজ টাই ঢেকে দিয়েছে।জগদীশ বোস -লেডি অবোলা আসতেন এই বাড়ির ঘরগুলো তে।নিবেদিতার ঘরে ঢুকে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম ঔ কাঠের চেয়ার দুটোয় মুখোমুখি বসে কথা বলছেন খোকা ও ভগিনী। ম্যালের অক্সফোর্ড, কেভেন্টার্স-এ কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে বরফি। সবই দার্জিলিং, শুধুই দার্জিলিং….
অস্মিতা, তুই তো ওখানেই রয়েছিস, বল না কেন আসাম, উটির চা বাগানের চেয়ে এগুলো বেশি ভালো লাগে, কেন ওই টয়ট্রেনটা আমাদের নিজের, কেন আসপাশে কোথাও গেলে দার্জিলিং-এ পৌঁছেই যাই, আর বেড়াতে যাবার নাম শুনে বাবাকে একটা কথাই বলি……..
………খাদের ধারের রেলিংটা…….আমার দার্জিলিং……