ভোরের আলো ফোটার আগেই দরজায় ঠকঠক। এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়া গেল একটাই কারণে। শ্রীলঙ্কার ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ফেব্রুয়ারির মতো শিরশিরানি নেই। আর এমনিতেই গত রাত থেকে উত্তেজনায় ভালো করে ঘুম হয়নি। পাথরের মাথায় রোদ পোহানো লেপার্ডদের গুগল ইমেজের ছবিগুলোই সবসময় চোখে ভাসছে। বিশ্বের সবথেকে বেশি লেপার্ড ডেনসিটি, দু-একটা কী আর দেখতে পাবো না!
নুয়ারা ইলিয়া থেকে নেমে আগের রাত কাটয়েছিলাম তিস্সায়। গন্তব্য ইয়ালা ন্যাশনাল পার্ক। তিস্সা থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে বেশিক্ষণ লাগল না। যখন পৌঁছলাম, তখন প্রথম আলোয় এক অদ্ভূত দৃশ্যপটের ওপর থেকে পর্দা উঠতে শুরু করেছে। দূর থেকে চোখে পড়ছে হাতির আকারের পাহাড়চূড়া, সকালের রোদে তা ক্রমশ লালচে, লালচে থেকে ধূসর রঙে সেজে উঠছে। ইয়ালা ন্যাশনাল পার্কের সিগনেচার।
পার্কে ঢোকার মুখেই স্বাগত জানাল একটা ফিশ ঈগল। সকাল থেকে অজস্র গাড়ির ভিড়। তারই মাঝে একে একে দেখা দিতে লাগল ওয়াটার বাফেলো, চিতল, রেডিও কলার পরানো হাতি, আর অজস্র পাখিরা।
গাড়ি থেকে ফুট দশেক দূরত্বে সঙ্গিনীকে নাচে ভোলাতে ব্যস্ত ময়ূর। আমাদের উপস্থিতিকে সে পাত্তাও দিল না।
এরপর অপেক্ষার প্রহর। এক একটা পাথরের স্তুপের কাছে গিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকা।এইসময় যদি কোনও একটা পাথরের ওপর চিতাবাঘের দেখা মেলে। কিন্তু না, প্রায় পাঁচঘণ্টার জাঙ্গল সাফারিতেও শিকে ছিঁড়ল না ভাগ্যে।
হুডখোলা গাড়ি এগোতে থাকল আলোছায়া বিছোনো পথ ধরে। জঙ্গলের মাঝখানে একটা জায়গায় বাঁক নিয়েই একি! সামনে ধূ ধূ সমুদ্র। জঙ্গল শেষ, সমুদ্র শুরু। রোদ্দুরে চকচকে অ্যালুমিনিয়াম চাদরের মতো ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। সমুদ্রের ধারে আধঘণ্টা কাটিয়ে ফেরার পথ।
হুডখোলা গাড়ি এগোতে থাকল আলোছায়া বিছোনো পথ ধরে। জঙ্গলের মাঝখানে একটা জায়গায় বাঁক নিয়েই একি! সামনে ধূ ধূ সমুদ্র। জঙ্গল শেষ, সমুদ্র শুরু। রোদ্দুরে চকচকে অ্যালুমিনিয়াম চাদরের মতো ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। সমুদ্রের ধারে আধঘণ্টা কাটিয়ে ফেরার পথ।
তখনও ইতিউতি গাছের পাতার আবডালে, গুঁড়ির আড়ালে, পাথরের ওপর তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে থাকা। যদি তার দেখা মেলে। কিন্তু নাঃ…’ধরতে গেলে আর পেলেম না’।