সেই রাজবাড়ি এখনও আছে। আছে সেই আরামকেদারা, যেখানে রবি ঠাকুর বসতেন, লিখতেন। চাইলে মধুপুরের সেই রাজবাড়িতে আপনিও থাকতে পারেন। আর এই সবকিছু নিয়েই লিখছেন গৌতম ঘোষ।
আবহাওয়া জনিত পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বাংলায় শীতের আমেজ পোয়াতে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। বাঙালি হাপিত্যেস করে থাকে, কখন শীতের দুপুরে ভাত ঘুমে চাদর মুড়ি দিয়ে একপ্রস্থ ঘুমিয়ে নেবে। কিন্তু হায়! শীতের আমেজ শুধু বঙ্গের বুকে চাদর মুড়ি দিয়ে কাটিয়ে দেবেন?
বছরের এখন শুরুই বলতে পারেন। শীত এখনও ব্যাট করছে। যাই যাই করে আরও বেশ কিছু দিন থেকে যাবে। তাই বাংলার বাইরে দিন কয়েকের জন্য ঘুরে আসার এই তো সময়। অনেকে অনেক নামই বলবে। কিন্তু সেই নামটা যদি মধুপুর বা গিরিডি হয়, তাহলে তো লা জবাব। এই দুই শহরের আনাচে কানাচে এখনও সযত্নেই লালন পালন করে চলেছেন এই দুই শহরের বাঙালি পরিবারগুলি। যদিও ‘অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম’ এর পথে চলে অনেকেই আজ কলকাতামুখী হয়েছেন। অথবা বার্দ্ধ্যকজনিত কারণে কলকাতায় চলে এসেছেন। তবে নিজদের কৃষ্টিকে আঁকড়ে ধরে রাখার আকুতি এখনও মধুপুর আর গিরিডিতে বসবাসকারী বাঙ্গালি পরিবারগুলের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। আর এই আকুতি থেকেই মধুপুরে প্রতি বছর বাঙ্গালিদের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে।
তাই একবার প্রবাসে বাঙ্গালিদের বসবাসের ওই জায়গাটায় একবার ঘুরে আসুন। না হলে, মনের আয়নায় প্রকৃতিকে এঁকে নেওয়ার সুযোগ থেকে থেকে বঞ্চিত হবেন আর সারাটা জীবন একটা অদৃশ্য অপরাধবোধ আপনাকে তাড়া করে বেড়াবে। একবার পশ্চিমের হাওয়ায় পা রেখে দেখুন বয়স আপনার এক লাফে অনেকটাই কমে যাবে! যাবেন কীভাবে!
হাওড়া স্টেশন থেকে তুফান মেল, মোকামা প্যাসেঞ্জার ট্রেন রয়েছে। উঠে পড়ুন ট্রেনে, একদিনের যাত্রাপথ। এছাড়া দিল্লিগামী(ভায়া পাটনা-মোগলসরাই) ট্রেন রয়েছে। মধুপুর জংশন স্টেশনে নেমে আশে পাশেই ধর্মশালা আর হোটেল রয়েছে। এরপর বিশ্রাম নিয়ে মধুপুরের অলিতে গলিতে ঘুরে আসুন। অনেক অচেনা অজানা স্থাপত্য কীর্তির নজির ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রয়েছে কালী মন্দির, কপিল মঠ, পঞ্চ মন্দির। মধুপুরের সবথেকে বড় আকর্ষণ মধুপুর রাজবাড়ি। একদা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের কিছু সময় কেটেছিল এই রাজবাড়িতে। যে আরাম কেদারায় বসে কবিগুরু তাঁর চিন্তার অভিব্যক্তিকে লেখনীর ছোঁয়ায় মর্মস্পশী করে তুলেছিলেন সেই আরাম কেদারা এখনও অক্ষত রয়েছে। আপনি ইচ্ছে করলে মধুপুরের এই রাজবাড়িতেও থাকতেও পারেন। তবে স্টেশন থেকে রাজবাড়ি একটু ভিতরের দিকে। রাজবাড়ির পাশেই শতাব্দী প্রাচীন একটি গির্জা রয়েছে। যা মধুপুর শহরের এক বিশেষ আকর্ষণ।
দিন কয়েক মধুপুরে কাটানোর পর মধুপুর জংশন স্টেশন থেকেই গিরিডিগামী মেমু ট্রেন(লোকাল ট্রেন) ছাড়ে। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন গিরিড়ি। গিরিড়ি স্টেশন রোডে আপনি থাকার হোটেল পেয়ে যাবেন। গিরিডিতে থাকতে না চাইলেও অসুবিধার কিছু নেই। গিরিডি স্টেশন রোড থেকেই অটো পরিষেবা পাবেন। অটোতে দর কষাকষি করে ঘুরে আসুন উস্রী ঝর্ণা। এর স্থানীয় নাম ওয়াটার লেক। এই নামেই গিরিড়ি অঞ্চলের লোকেরা উস্রী ঝর্ণাকে চেনে। ঘন্টা চারেক জঙ্গলে ঘেরা চড়াই উৎরাই পথ পেরিয়ে আপনি উস্রী ঝর্ণার সৌন্দর্যকে উপভোগ করে নিতে পারবেন। একসময় মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলে ঘেরা উস্রী বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলির কাছেও ধীরে ধীরে শিক্ষামূলক ভ্রমণকেন্দ্র হয়ে উঠছে। ঘন্টা চারেকের উস্রী ঝর্ণার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার জীবনের সেরা সঞ্চয় থাকবে! আপনি যদি গিরিডিতে রাত্রিবাস করতে চান তাহলে থাকতে পারেন আর নয়তো মধুপুরে ফিরে আসতে পারেন।
তবে গিরিডি থেকে আপনি হাওড়া স্টেশনগামী কোনো ট্রেন পাবেন না। গিরিডি থেকে মেমু ট্রেন(লোকাল ট্রেন) ধরে আপনাকে মধুপুর জংশনে আসতেই হবে। মধুপুর জংশন থেকে আপনি হাওড়া স্টেশনগামী অনেক ট্রেন বিভিন্ন সময়ে পেয়ে যাবেন। তাই আর দেরি না করে বছরের শুরুতেই মধুপুর আর গিরিড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি সেরে ফেলুন।