নামেই ভিন রাজ্য। আসলে, একেবারেই পড়শী। দিঘা পেরিয়ে একটু গেলেই তালসারি। সেখান থেকে ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন বিচিত্রপুর। সৈকত জুড়ে লাল কাঁকড়ার মিছিল। নির্জনতা আর অরণ্য মিলিয়ে অন্য অনুভূতি। দু’দিনের সেই ঝটিকা সফরের কথা উঠে এল রূমা ঘোষের কলমে।
প্রস্তুতিঃ
আমরা তিন দম্পতি বেশ কিছু দিনের বেড়ানোর সাথী। প্রথমে ভাবলাম বখখালি। তারপর অনেকেই বলল, ধ্যুস, ওখানে নতুন কিছুই তো নেই, দিঘাও তো তাই। তখন আমদের একজন বলল, দাঁড়াও। বলেই কাদের সঙ্গে ফোনাফুনি করে বলল, পেয়েছি। আমাদের এক বন্ধু সুদীপ মাইতি, দিঘার ১০ কিলোমিটার দূরে দেপালে থাকে। লেখালেখি করে। ফোনে ওকেই ধরে ছিলাম। ও বলল, ‘তালসারি চলে আসুন। কাছাকাছি বিচিত্রপুর ম্যানগ্রোভ। জায়গাটা আপনাদের ভাল লাগবে দাদা’। ভেবে দেখলাম, জায়গাটা আমাদের ৬ জনের কাছেই নতুন। ভিড়ও কম। তাই এটাকেই ফাইনাল করা হল।
যাত্রাঃ
জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে সবাই মিলে গাড়ি ভাড়া করে রওনা হলাম সকাল সাড়ে সাতটায়। প্রথম গন্তব্য কোলাঘাট শের-ই-পাঞ্জাব। জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করে সোজা তালসারি। পথে মেঘ রোদ্দুরের খেলা-র পুরনো হিন্দি সিনেমার গান জমে ক্ষীর। দিঘা পেরিয়ে আমরা পৌঁছলাম তালসারি। ঘড়িতে তখন দুপুর ১-৩০। আমরা ছিলাম Hotel Shree Inn(Deluxe Room)-এ। ঘর গুলো খুব সুন্দর। দূর থেকে সমুদ্র দেখা যায়। হোটেলের সবার ব্যবহারও খুব ভাল। আমরা আগে থেকেই জানিয়েছিলাম কাঁকড়ার থালি নেব। জানিয়ে রাখি, এই হোটেলের খাবারের দাম একদম ঠিকঠাক আর খাবারও বেশ ভাল। ডাল, আলু ভাজা, সবজি, কাঁকড়ার ঝাল দিয়ে দুপুরের খাবারটা এক কথায় অনবদ্য। খেয়ে ঘরে ফিরলাম ৪ টেয়। পরবর্তী গন্তব্য বিচিত্রপুর।
বিচিত্রপুরঃ
খেয়ে দেয়ে গড়িয়ে কারোরই আর বেরোনোর ইচ্ছা তেমন একটা ছিল না। কিন্তু উপায় নেই, পরদিনি ফেরা। নাহ, যেতেই হবে। অগত্যা বেরিয়েই পড়লাম। সঙ্গে গাড়ি ছিল, তাই কোনও অসুবিধেই নেই। বিচিত্রপুর রওনা হলাম বিকেল ৫ টায়। গুগল ম্যাপ সঙ্গে থাকলে অনেকটাই মুশকিল আসান হয়ে যায়। অন্ততঃ পথ হারানোর ভয় থাকে না। ওখানে পৌঁছে শুনলাম ৫ টায় শেষ নৌকা ছাড়ে, আর এখন ৫-৪৫। মন মরা হয়ে গেলাম সবাই। সত্যি যাওয়া হবে না? ঐ সময় দেখি একটা নৌকা ক’জনকে নিয়ে ফিরছে। একটু দরাদরির পর একসঙ্গে ৬ জনকে দেখে রাজি হল। সবাই বেশ খুশি। নৌকা এগিয়ে চলল দু’পাশের ম্যানগ্রোভ আর পশ্চিমে অস্তমিত সূর্যটাকে সঙ্গে নিয়ে। ১৫ মিনিট নৌকা যাত্রার পর পৌঁছলাম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে। সুন্দরবনের সঙ্গে তুলনা করা অনর্থক ম্যানগ্রোভের একদিকে সমুদ্র অন্যদিকে নদী। জোয়ারের নদীর জল ম্যানগ্রোভে ঢুকে এক মনোরম পরিবেশ তৈরি করে। আমরা যখন গেছি, ম্যানগ্রোভে জল ছিল না। কিন্তু ছিল কানা মাছি খেলা একঝাঁক লাল কাঁকড়া। বেশ কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গে কাটানোর পর বুঝলাম সন্ধ্যে নেমে আসছে। এবার ঘরে ফেরার পালা।
তালসারি সমুদ্র সৈকতঃ
পরদিন সকালে উঠে পরিপুষ্ট প্রাতরাশ সেরে গেলাম তালসারি সমুদ্রসৈকত। নৌকায় নদী পেরিয়ে যেতে হয়। তাও শুধু জোয়ারের সময়। কিন্তু আমরা যখন যাই, তখন ভাঁটার টান। তাই হাতে জুতো নিয়ে হেঁটেই নদী পেরিয়ে ঝাউবনের মধ্যে দিয়ে পৌঁছলাম দারুণ সুন্দর একটা সি বিচে। পরিষ্কার এবং বেশ ফাঁকা এই সমুদ্র সৈকত মূলতঃ মাছ ধরার জন্যই ব্যবহার করা হয়। সমুদ্রের ঢেউ দিঘা- পুরীর থেকে কম, জল অনেক পরিষ্কার। বেশ কিছুক্ষণ জলকেলির পর হোটেলে ফিরে এলাম। ব্যাগ গুছিয়ে ফিরতে হবে যে।
ফিরতি পথেঃ
হোটেলের সব দাম মিটিয়ে এক ব্যাগ আনন্দ নিয়ে ফিরে যাবার পালা। ফেরার পরে ঠিক হল, দিঘায় দুপুরে খাব। যেমন কথা, তেমন কাজ। দিঘায় রবিবার চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। সমুদ্রের পাড়ে যেন জনসমুদ্র। সমুদ্রকে দূর থেকে দেখেই সাধ মেটালাম সবাই। কষে কষায় জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করে, শুরু করলাম বাড়ির পথে যাত্রা। হয়তো বা নতুন বেড়ানোর সূচনা।