অনেকে গরমের সময় ঠান্ডার দেশে যান, তবে হাল্কা বা বেশি শীতের সময়েও যাওয়া যায়। আর তখন,
সেই জায়গার সৌন্দর্য এক লাফে অনেকখানি বেড়ে যায়।
ঠিক তাই। আপনি আর দু’মাস পরের কথা এখন থেকে ভাবতেই পারেন। কারণ, ‘করোনা ভাইরাস’-এর
থেকে বাঁচতে দিনের পর দিন বাড়িতে ‘লকড ডাউন’ হয়ে সব দিক দিয়ে আপনি যখন বিপর্যস্ত, তখনই তো দরকার এক ঝলক খোলা হাওয়া। যা আপনাকে দিতে পারে মুক্তির অনাবিল আনন্দ। করোনা-কে হারাতে ‘স্টে অ্যাট হোম’ থেকে কবে মুক্তি পাবেন ভেবে ভেবে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অথচ, এর পরের দিনগুলির লড়াই আপনার কাছে আরও গুরত্বপূর্ণ। মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক অবরোধ আপনাকে কাটিয়ে উঠতেই হবে। আর এজন্যই দু’দিন কাছে পিঠে কম খরচে কোথাও ঘুরে এসে একেবারে তরতাজা হয়ে পরবর্তী লড়াইয়ে সামিল হতে পারেন। তাই এটা শুধু গুরুত্বপূর্নই নয়, ভীষণ রকম জরুরীও।
আর দু’মাস পরেই আবার বর্ষা শুরু হতে পারে, তাই ভাবুন কোথায় যাবেন? কারণ, বর্ষার পাহাড়কে এড়িয়ে চলাই ভাল। তাই পাহাড়ের কথা বাদ দিন। যদি সিকিমের দিকে যেতে চান, সেখানেও বিপদ। যখন তখন ধস নেমে রাস্তা বন্ধ। জঙ্গলে তো ঢুকতেই পারবেন না। তার থেকে জলের দেশে ঘুরে এলে কেমন হয়? বেশিদূর নয়, কাছেই- মুকুটমণিপুর। যেখানে খরচও বেশি নয়।
এখন শিরোনামেই আছে বাঁকুড়া। এই জেলা গরমে সবাইকে ছাপিয়ে যায়। মাধ্যমিকের রেজাল্টেও শীর্ষে থাকে।
গরমে সেরা, কখনও কখনও বর্ষাতেও সেরা। এমনিতে রুক্ষ মাটির দেশে বন্যা হয় না। কিন্তু টি ভি খুললেই দেখতে পাবেন, সেতুর ওপর দিয়ে জলের স্রোত বইছে। টিভি’তে প্রতিবছরই শোনেন, মুকুটমণিপুর থেকে এত কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, অত কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। আর তখনই বাঁকুড়া জেলার এই ছোট্ট পর্যটন কেন্দ্রটি শিরোনামে উঠে আসে। জলাধার যখন কানায় কানায় পূর্ণ, তখনই মুকুটমণিপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। যা মুকুটমণিপুরের সৌন্দর্য উপভোগের আদর্শ সময়।
কীভাবে যাবেন? খুব সহজ। যারা ট্রেনে যাবেন, তাঁরা রুপসী বাংলা বা আরণ্যক ধরে বাঁকুড়ায় নামতে
পারেন। সেখান থেকে বাসে ঘন্টা দুই। গাড়ি ভাড়া করলে আরও তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবেন। থাকার জন্য
সরকারি ব্যবস্থা যেমন আছে, তেমনি বেসরকারি ব্যবস্থাও আছে। সরকারির মধ্যে ইরিগেশন বাংলো, যুব
আবাস, সোনাঝুরি। বেসরকারির মধ্যে আছে অপরাজিতা, আম্রপালি। পিয়ারলেসেরও আছে। তবে ভাড়া বড্ড বেশি।
কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। শুধু বিকেলবেলা বাঁধানো পাড় ধরে হেঁটে আসুন। এশিয়ার দ্বিতীয় মাটির বাঁধ। একপাশে জল তো অন্য পাশে জঙ্গল। সবমিলিয়ে দারুণ এক দৃশ্যকল্প। ভুটভুটি ভ্যান নিয়ে চলে যান মুশাফিরখানায়। নতুন একটি পার্ক। বেশ সাজানো-গোছানো। সৌন্দর্যায়নের নতুন ঠিকানা। আরেকটু গেলে পরেশনাথ মন্দির। সবমিলিয়ে এক ঘন্টার দারুন সফর।
যদি বৃষ্টি পড়ে? একটু না হয় ভিজলেন। আশেপাশে দোকানও আছে। চাইলে সেখানে আশ্রয় দিতে পারেন।
বোটিং করতে পারেন। তবে ভরা জলাশয়ে সাঁতার না জানলে বোটিং এড়িয়ে চলাই ভাল। দুটো দিন সুন্দরভাবে কেটে যাবে। এবার মহালয়া সেপ্টেম্বরে। আর বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই সময় থেকেই হয়ত আমরা প্রায় পুরোপুরি করোনা মুক্ত হব। মহালয়ার পর থেকেই ভিড় শুরু হয়ে যাবে। মহালয়ার পরে যারা আসবেন, তারা ছলাৎছল জলের আওয়াজ পাবেন না। ভরে ওঠা মুকুটমণিপুরের সৌন্দর্যই আলাদা। যারা পুজোর পর বা শীতকালে আসবেন, তারা নিশ্চিতভাবেই বঞ্চিত হবেন। তাই ফাঁকায় ফাঁকায় ঘুরে নেওয়াই ভাল।
জল যতই বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাক, তাতে আপনার ভয়ের কিছু নেই। পর্যটকদের কাছে একেবারেই নিরাপদ। আর ঝিরঝির বৃষ্টিতে একটু ভিজতে মন্দ লাগবে না। বাঁধানো পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে গেয়ে উঠুন- আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম।