যদি আমাকে প্রশ্ন করেন যে সুবাসে সুগন্ধে হারিয়ে যাওয়ার জন্য কোথায় যাওয়া যায়, আমি অবশ্যই বলবো আমার দেশের যশোর (jessore) জেলার ঝিকরগাছা (jhikargacha) আসুন। ঝিকরগাছার গদ-খালি (jhikargacha godkhali) যেখানে আছে হাজারো প্রজাতির কোটি ফুলের সুবাস। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে সবচেয়ে বেশি ফুলের সমারোহ দেখা যায়।
ঝিকরগাছার (jhikargacha) এই গ্রাম ও আশপাশের হাজার হাজার একর জমিতে বছর জুড়ে উৎপাদন হচ্ছে দেশী বিদেশী নানা জাতের ফুল যার বার্ষিক বাজার মূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের (bangladesh) সম্পূর্ণ ফুলের চাহিদা মিটিয়ে এবার এসব ফুল পাড়ি দিয়েছে বিদেশে।
যশোরের (jessore) ঝিকরগাছা (jhikargacha) উপজেলার গদ-খালী (godkhali) ও পানি-সারা সহ ছয়টি ইউনিয়নের ৭০০ হেক্টরের বেশি জমিতে প্রায় ছয় হাজার চাষি সারাবছরই ফুল চাষ করেন। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।
যশোর (jessore) সদর থেকে প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দুরে ঝিকরগাছার (jhikargacha) এই গদ-খালী (godkhali) গ্রাম । কল্পনা করুন আপনি কোনো এক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন যেখানে যত দূর চোখ যায় শুধু ফুল! ভাবলেই অন্য রকম শিহরণ কাজ করে, তাইনা?
কিভাবে শুরু হলো ফুল চাষের?
শের আলী সরদার, যিনি চার দশক আগে প্রথম শুরু করেন ফুলের চাষ। প্রথম চাষ-কৃত জমি ছিল রজনীগন্ধা!
রজনীগন্ধা চাষ হতো পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে। শের আলি খান প্রথম ব্যাক্তি যিনি চিন্তা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মাটি প্রায় একই রকমের। তাহলে কেমন হয় যদি ধান পাটের বদলে রজনীগন্ধা চাষ করেন জমিতে!
শের আলি সরদারের একটি বিবৃতি নেওয়া হয়েছিল বিবিসি (BBC) থেকে। সেখানে তিনি বলেন, “১৯৮২ সালে এরশাদ আমলে এক বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা দিয়ে শুরু করেছিলাম। আমার বাবার নার্সারি ছিলো এবং আমি সেখানেই বসে ছিলাম। ভারত থেকে আসা এক ভদ্রলোক এসে পানি চেয়েছিলো। ওই ভদ্রলোকের হাতে রজনীগন্ধা দেখে প্রথম চিন্তা করি রজনীগন্ধা চাষের।” আর এর পর থেকে নিত্য নতুন ফুল এসে জায়গা করে নেয় সারা গদ-খালি (godkhali) জুড়ে!
কিভাবে সম্ভব হচ্ছে এতো ভাল ফুলের চাষ?
এই প্রশ্নের উত্তরে উঠে আসে যে ভারত ও চীন থেকে বিশেষজ্ঞ চাষিদের আনা হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের সহায়তার জন্য বিশেষ করে পলি হাউজগুলো তৈরিতে সহায়তার জন্য। আবার বিএডিসি (BADC) যে গবেষণা করে সেখানেও তারা সহায়তা করেন।
নিত্য নতুন ফুল চাষের জ্ঞান দিচ্ছে বিশেষজ্ঞরা এবং শ্রম দিচ্ছে কৃষকেরা আর তাতে যে ফসল হচ্ছে তা আপনি নিজে চোখেই দেখে যান।
কোনো কোনো চাষি জানান দিনে তারা চার থেকে পাঁচ হাজার গোলাপও সংগ্রহ করেন কখনো কখনো। বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস, মাতৃভাষা দিবস ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুল আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সজ্জা উপাদান।
আপনি জানলে অবাক হবেন গদ-খালি (godkhali) তে একটা গোলাপ ৩ টাকা এবং একটা জার্ভেরা ৫ টাকা। যদি আপনি একসাথে অনেক গুলো নিতে চান কোনো চাষি আপনাকে ২ টাকাতেও একটি গোলাপ দিয়ে দিবে।
সেখানে যেমন চারদিকে তাকাতে আপনি কোমল আর রঙিন একটি দুনিয়া দেখবেন তেমনই সেখানকার কৃষকের মন। আপনি তার জমিতে ঘুরুন ছবি তুলুন, দু একটি পছন্দের ফুল তুলুন, কোনো নিষেধ নেই। একটু সম্মান আর ভাল ব্যবহারই তাদের জন্য অনেক কিছু।
আপনি যদি প্রকৃতি প্রেমী হন, শুদ্ধতা কামনা করেন, আপনাকে স্বাগতম বাংলাদেশের যশোর জেলায়। আপনি যে যশোর থেকে শুধু ফুল দেখে ফিরবেন তা কিন্তু নয়। এর সাথে আছে বিখ্যাত খেজুরের গুড়, মিষ্টি এবং শত বছরের পুরোনো গাছ যেগুলো পরিবেশ কে রেখেছে নিরাপদ। ঝড় এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করছে যশোর জেলাকে।