“আমার মনের মানুষের সনে…”
গানের লাইনটা শুনেও কি আপনার সাধক, গায়ক, গীতিকার, সুরকার, বাউল-দার্শনিক লালন ফকিরের কথা মনে পড়ে নি?
কখনো কি আপনি এই আধ্যাত্মিক গানের লাইনে হারিয়ে যাননি! যে মানুষটা তার সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে সাধনা করে, চলুন ঘুরে আসা যাক তার সাধনা ক্ষেত্র।
লালন তরুণ বয়সে একবার তীর্থভ্রমণে বের হয়ে পথিমধ্যে গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। তখন তার সাথিরা তাকে মৃত ভেবে পরিত্যাগ করে যার যার গন্তব্যে চলে যায়। কালিগঙ্গা নদীতে ভেসে আসা মুমূর্ষু লালনকে উদ্ধার করেন মলম শাহ। আধ্যাত্মিক সাধক লালন শাহ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়াতে আশ্রয় লাভ করেন এবং পরবর্তীকালে ছেঁউড়িয়াতে মৃত্যুর পর তাঁর সমাধিস্থলেই এক মিলন ক্ষেত্র (আখড়া) গড়ে ওঠে।
কখনো কি আপনি এই আধ্যাত্মিক গানের লাইনে হারিয়ে যাননি! যে মানুষটা তার সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে সাধনা করে, চলুন ঘুরে আসা যাক তার সাধনা ক্ষেত্র।
লালন তরুণ বয়সে একবার তীর্থভ্রমণে বের হয়ে পথিমধ্যে গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। তখন তার সাথিরা তাকে মৃত ভেবে পরিত্যাগ করে যার যার গন্তব্যে চলে যায়। কালিগঙ্গা নদীতে ভেসে আসা মুমূর্ষু লালনকে উদ্ধার করেন মলম শাহ। আধ্যাত্মিক সাধক লালন শাহ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়াতে আশ্রয় লাভ করেন এবং পরবর্তীকালে ছেঁউড়িয়াতে মৃত্যুর পর তাঁর সমাধিস্থলেই এক মিলন ক্ষেত্র (আখড়া) গড়ে ওঠে।
সাধক লালন শাহ এর ভক্ত এবং শিষ্যরা বিশেষ তিথিতে এখানেই মিলিত হয়ে লালনের স্মরণে উৎসব পালন করেন। ১৯৬৩ সালে সেখানে তার বর্তমান মাজারটি নির্মাণ করা হয় এবং তা উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান। ২০০৪ সালে সেখানেই আধুনিক মানের অডিটোরিয়ামসহ একাডেমী ভবন নির্মাণ করা হয়। লালন শাহ এর মাজারে গিয়ে আপনি সবার আগে যেটা দেখতে পাবেন সেটা হল হাজারো ভক্তের আনাগোনা।
৩ দিন ব্যাপি বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় আর এই অনুষ্ঠানের সময়সূচি ঠিক করা হয় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। জানা যায় লালন সাঁইজি জীবিত থাকাকালে ফাল্গুন মাসের শেষে দোল পূর্ণিমা তিথিতে কালী নদীর তীরে শিষ্যদের নিয়ে রাতভর গান-বাজনা ও তত্ত্ব আলোচনা করতেন।
কুষ্টিয়া (kushtia) শহরের কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নদী তীরের ছেঁউড়িয়ার লালন সমাধি। বাংলা ১২৯৭ সালের পয়লা কার্তিক এখানেই মরমী সাধক লালন শাহ (Lalon fakir) মারা যান। এরপর থেকে এ এলাকায় তার স্মরণোৎসব পালিত হয়ে আসছে। সাঁইজির রীতি অনুসারে দোলপূর্ণিমার রাতের বিকালে অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার দোল-সঙ্গ শুরু হয়।
চৈত্রের পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নার ছটায় আর মাতাল হাওয়ায় গানে গানে বাউল সাধকরা হারিয়ে যায় ভিন্ন কোনো জগতে। পরের দিন চারটায় ‘পুণ্য-সেবা’ দিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ করে আখড়া-বাড়ি ত্যাগ করেন বেশিরভাগ সাধু।
চৈত্রের পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নার ছটায় আর মাতাল হাওয়ায় গানে গানে বাউল সাধকরা হারিয়ে যায় ভিন্ন কোনো জগতে। পরের দিন চারটায় ‘পুণ্য-সেবা’ দিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ করে আখড়া-বাড়ি ত্যাগ করেন বেশিরভাগ সাধু।
এই অনুষ্ঠানের সাথে মাজার প্রাঙ্গণেই থাকে মেলার আয়োজন। কিছু পত্রিকা লালনের মারা যাওয়ার পরে তাকে মুসলিম বলে দাবি করে, আবার কিছু পত্রিকা জানান তিনি হিন্দু। জীবদ্দশায় লালন শাহ (Lalon fakir) কোনো ধর্ম ই পালন করেননি বলে জানা যায়।
তিনি আসলে ধর্মের চেয়ে মানুষ কে প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। তার কাছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ হিসেবেই ছিল তার বিশেষ পরিচয়। তিনি নিরক্ষর ছিলেন, গুটি বসন্তের পর হারান চোখের দৃষ্টি ও কিন্তু তার পরেও তিনি রচনা করেছেন ২৮৮ টি গান।
তিনি ঠিক কতটা সাধারণ ভাবে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছেন সেটা জীবদ্দশায় তার ব্যবহারই বলে দেয়। লালনের কোনো গানে তার জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য তিনি রেখে যাননি, তবে কয়েকটি গানে তিনি নিজেকে “লালন ফকির” হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
তার মৃত্যুর পনেরো দিন পর কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত হিতকরী পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, “ইহার জীবনী লিখিবার কোন উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছু বলিতেন না। শিষ্যরা তাঁহার নিষেধক্রমে বা অজ্ঞতাবশতঃ কিছুই বলিতে পারে না।
তার মৃত্যুর পনেরো দিন পর কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত হিতকরী পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, “ইহার জীবনী লিখিবার কোন উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছু বলিতেন না। শিষ্যরা তাঁহার নিষেধক্রমে বা অজ্ঞতাবশতঃ কিছুই বলিতে পারে না।
তার ভক্তদের আনাগোনা দেখলে ধারণা করা যায় তিনি মানুষের মনে ঠিক কতোটা জায়গা করে আছেন।
বিখ্যাত মানুষ যুগে যুগে জন্মায় না। তিনি হয়ত জন্মেছিলেনই বিখ্যাত হওয়ার জন্য। জ্ঞানপিপাসু মানুষের জন্য লালন শাহ এর আখড়া ভ্রমণের চেয়ে অনুভব করার জন্য আসার প্রয়োজনীয়তা বেশি।
প্রয়োজনীয়তা বলা যায় কারন এখানে আসলে আপনি বুঝতে পারবেন একজন মানুষ ঠিক কতোটা সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করেও জায়গা করে নিয়েছে লক্ষ মানুষের মনে। মৃত্যর এত বছর পরেও তার স্মরণে কতো কলরব।