চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুণ্ড

Chandranath Hills, Sitakunda

Chandranath Hills
ভ্রমণ পছন্দ হওয়ার সুবাদে অনলাইনের একটি ভ্রমণ গ্রুপে আছি। উদাস মনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তারা গুনছিলাম, হটাৎ ফেসবুক নোটিফিকেশন এর শব্দে ঘোর কাটে। ঘরে এসে নোটিফিকেশন দেখলাম এডমিন পোস্ট করেছে ভ্রমণ গ্রুপে সীতাকুণ্ড (sitakunda) যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি এডভেঞ্চার খুব পছন্দ করি। সীতাকুণ্ড মানেই তো এডভেঞ্চার।
 
২ দিন পরে ট্যুরের দিন ঠিক করা হলো, এর মধ্যে গুছিয়ে নিতে হবে সবকিছু। এই ভ্রমণ গ্রুপের নিজস্ব বাস আছে সেই বাসে করেই যাত্রা শুরু বিকাল ৪ টায়। রাতে গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে সকাল থেকে ঘুরাঘুরি শুরু। সকাল ৭ টায় বের হলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের (chandranath hill) উদ্দেশ্যে, নাস্তা করতে সীতাকুণ্ড বাজারে পৌঁছে যে ভিড় দেখা গেল তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমন চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য দেখতে লোকেরা ভিড় করবে এটাই স্বাভাবিক।
Chandranath Hills
পাহাড়ে উঠবো কিভাবে, তাও ১২০০ ফুট, তা ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলাম পাহাড়ের পাদদেশে। ৫০০ টাকা দিয়ে একটা গাইড ঠিক করলাম। যদিও গাইডের দরকার নেই (পাহাড়ে পড়ে থাকা  বোতল ও বিস্কুটের প্যাকেট ধরে এগোতে থাকলে চন্দ্রনাথ চূড়ায় (chandranath hill) পৌঁছে যাবেন), কিন্তু দলের অনেকেই প্রথম বার পাহাড়ে ট্রেকিং করবে তাই রিস্ক নিতে চাই নি। সাথে থাকা ১০ টা ১.২৫ লিঃ পানির বোতল এবং ২০ টাকা দিয়ে বাঁশ কিনে আমরা শুরু করি মিশন চন্দ্রনাথ।
 
৩০ মিনিট হাটার পর পেলাম একটা ঝর্না যার দু পাশে দুটো রাস্তা উপরে উঠে গেছে। দুটো দিয়েই চূড়ায় যাওয়া যায়। বাঁপাশের রাস্তাটায় সময় বেশি লাগলেও কষ্ট কম হয় তাই বাম পাশ দিয়ে উঠা শুরু করলাম। গ্রুপে চন্দ্রনাথ নিয়ে যতগুলো পোষ্ট দেখেছিলাম সবগুলোতেই বলা ছিল চন্দ্রনাথের (chandranath hill) ট্রেকিংটা অনেক কষ্টের। গাইড কে জিজ্ঞাসা করলাম কতো সময় লাগতে পারে বা আর কতো দূর গাইড শুধু বলছিল, “এইতো আর একটু”। 

তিনবার ১০ মিনিট করে রেস্ট নেবার পর এবং অর্ধেক পানি শেষ করার পর আমরা যখন বিরূপাক্ষ মন্দির পৌঁছলাম তখন আমাদের শরীর এবং মন দুটোর শক্তিই প্রায় শেষ। একটা পর্যায়ে যখন আবার গাইডকে জিজ্ঞাসা করলাম ”মামা আর কত দূর”, তখন সে বলল “এইত, আর অল্প একটু। বিরূপাক্ষ থেকে অল্প একটু করতে করতে আমরা ৩০ মিনিটের মত ট্রেকিং করে পৌঁছে গেলাম চন্দ্রনাথের চূড়ায় 
(chandranath hill)
Chandranath Hills
এত সুন্দর জায়গাও হতে পারে! পাহাড়টা মনে হচ্ছিল সাদা মেঘের মধ্যে ভেসে থাকা একটি দ্বীপ! ২/১ ঘণ্টা এখানে থেকে কখনোই তৃপ্তি মেটানো সম্ভব না। থেকে যেতে মন চাইবে ঘর বনিয়ে। মন্দিরের আসে পাশে বেশ অনেক ক্ষণ ঘুরাঘুরি করলাম, মুগ্ধ দৃষ্টিতে চারপাশে দেখতে দেখতে কখন যেন ২ ঘণ্টা পার করে ফেলেছি! গ্রুপ ফটো তুললাম কিছু তারপর আস্তে আস্তে নামতে শুরু করলাম। 

আরও কিছু জায়গা ঘুরে দেখার ইচ্ছা আছে তাই। সব মিলিয়ে ৫০ মিনিট মত লাগলো নামতে। অনেক কে দেখলাম উঠছে, কেউ কেউ আবার রাস্তায় বসে আর উঠবে না বলে বায়না ধরে বসে আছে।


এডভেঞ্চার সবাইকে দিয়ে হয় না ভেবে আমার মনে মনে বেশ হাসি পেল। এখনও আমি আর ৪ বার উঠে নামতে পারবো বলে মনে হচ্ছে। উপরের সৌন্দর্য নিয়ে ভাবলেই তো ওঠার কষ্ট কিছুই মনে হবে না।
Previous articleপ্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন
Next articleঝর্না স্নানে পরী
সাদিকা পেশায় কৃষিবিজ্ঞানের স্নাতক স্তরের ছাত্রী। গোপালগঞ্জের নিবাসী সাদিকা বাংলাদেশ বিষয়ক লেখালিখির ব্যাপারে আমাদের অন্যতম বিশেষজ্ঞ। নিজের দেশের প্রতি সাদিকার গভীর ভালোবাসা তার প্রতিটা লেখায় বারবার ফুটে ওঠে। ওর লেখাপড়ার বিষয়টি মাটির খুব কাছাকাছি হওয়ায় সাদিকার সাথে গ্রামবাংলার পরিচয় গভীর, আর লেখায় মাটির টান। উনি অবসর সময়ে ঘুরতে আর লেখালিখি করতে ভালোবাসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here