কাপ্তাই (kaptai lake) মূলত বাংলাদেশের সবচাইতে বড় মনুষ্যসৃষ্ট লেকের নাম। পাহাড়ে ঘেরা জেলা রাঙামাটিতে (rangamati) অবস্থিত এই লেকটি আমার অন্যতম পছন্দের একটি জায়গা। আজকের এই ভ্রমণনামায় মূলত কাপ্তাইয়ে (kaptai lake) একদিনের ভ্রমণ সম্পর্কেই বলবো।
রাঙামাটিতে (rangamati) অবস্থান হলেও রাঙামাটি কিংবা চট্টগ্রাম (chittagong) – দুদিক থেকেই কাপ্তাইয়ে (kaptai lake) প্রবেশ করা যায়। বন্ধুর বড় ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত পেয়ে আসলে আমরা কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম চলে যাই। এরই মাঝে একদিন কয়েকজন মিলে কাছেই কাপ্তাই (kaptai) থেকে ঘুরে আসার লোভ আর সামলাতে পারলাম না।
একদিন সকালে সবাই মিলে রওনা হয়ে পড়লাম কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে। চট্টগ্রাম (chittagong) থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত বাস চলে। আমরা সবাই বাসে ছাড়তেই খেয়াল করি আমাদের এক বন্ধু তখনো এসে পৌছায়নি। পরে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে বন্ধুটি আমাদের সাথে এসে রাস্তার মাঝপথে বাসে উঠতে সমর্থ হয়।
চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাইয়ের (kaptai) বাসে উঠে আমরা নতুন বাজারে বাস থেকে নেমে যাই। এখানে সকালের নাস্তা করে নিয়ে আমরা একটি সিএনজি (auto rikshaw/tuktuk powered by CNG fuel) ভাড়া করে নেই। মূলত একটি সিএনজিতে পাঁচ জনের জায়গা হয়। নতুন বাজার থেকে সিএনজি করে কাপ্তাইয়ের (kaptai lake) পাড় ঘেঁষে রাস্তা দিয়ে লেকভিউ দেখতে দেখতে একেবারে রাঙামাটি (rangamati) পর্যন্ত চলে যাওয়া যায়।
এই রাস্তাটি আমার দেখা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি। একদিকে কাপ্তাই লেক (kaptai lake), আরেকদিকে পাহাড়। এই দুইয়ে মিলে আমাদেরকে চনমনে করে তুলছিল এই সিএনজি জার্নিটা। পরিস্কার বাতাসে শ্বাস নিতে নিতে সারা দেহ যেন সতেজ হয়ে উঠছিল। পথিমধ্যে বেশ কিছু জায়গা পছন্দ হয়ে যাওয়ায় আমরা সিএনজি থামিয়ে সবাই মিলে চোখ জুড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছিলাম এবং ছবি তুলে নিচ্ছিলাম।
নতুন বাজার থেকে কাপ্তাই (kaptai) হয়ে রাঙামাটির (rangamati) দিকে যেতে যেতে আমরা পথিমধ্যে যাত্রা বিরতি নিই বেরাইন্যা লেকশোর ক্যাফেতে। এখানে আগে থেকে বলে রাখলে আপনি দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। তবে একটু দুর্গম এলাকা হওয়ায় সবকিছুর দাম এখানে অত্যন্ত বেশি। এখানে কায়াকিং করারও সুব্যবস্থা আছে। আমরা সবাই কায়াক নিয়ে কাপ্তাইয়ের জলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
পরিস্কার নীল আকাশের নিচে কায়াকিং করার মজাই আলাদা। কায়াকিং শেষে অভ্যাসমত আমি পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সাঁতার কাটতে। যেখানেই যাই না কেন, পানি দেখলেই আমার আর মাথা ঠিক থাকেনা। ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটা চাইই চাই!
আরও কিছুক্ষণ এই জায়গাটিতে কাটিয়ে আমরা আবার চড়ে বসি সিএনজিতে। আমাদের ড্রাইভার ভাই ছিলেন অত্যন্ত মিশুক একজন মানুষ। রাস্তাঘাটে যত রকমের স্থাপনা আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম সবকিছুই তিনি আমাদেরকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। এইসব এলাকাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোকজন বসবাস করেন বিধায় তাঁদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে চলাফেরা করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা ধীরে ধীরে চলে এলাম কাপ্তাইয়ের ঝুলন্ত সেতুর (rangamati hanging bridge on kaptai lake) কাছে। কাপ্তাইয়ের এই ঝুলন্ত সেতুটি বহু আগে থেকেই রাঙামাটির ট্রেডমার্ক ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সবাই মিলে এখানেও বেশ কিছু সময় একসাথে পার করার পর এগুলাম রাঙামাটি শহরের দিকে। শহরটা খানিক ঘুরেই ড্রাইভার ভাইয়ের পরামর্শে আমরা একটু বেলা থাকতেই আবার কাপ্তাই (kaptai) হয়ে চট্টগ্রামের দিকে ফিরতে শুরু করলাম।
এই রাস্তাটি দিয়ে আসলে সন্ধ্যার পর প্রায়ই বুনো হাতির চলাচল হয়ে থাকে। এজন্য বিকেলের পর এখানে চলাচল করাটা বেশ বিপদজনক। তাই যত দ্রুত সম্ভব আমরা আবার চট্টগ্রামের দিকে বেলা থাকতেই ফিরে আসি।
শুধুমাত্র একদিনের ভ্রমণ ছাড়াও আরো একটু লম্বা ভ্রমণের জন্যও কাপ্তাই একটি চমৎকার গন্তব্য। ইঞ্জিন বোট ভাড়া করে আপনি লেকের মধ্যে দিয়ে চলে যেতে পারবেন বরকল উপজেলা, শুভলং ঝর্ণা, শুভলং টিএন্ডটি পাহাড় সহ আরো চমৎকার কিছু জায়গায়। এছাড়া রাঙামাটির এদিকেই রয়েছে ধুপপানি ঝর্ণা নামে অনেক সুন্দর একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা।
ঢাকা থেকে সহজেই চট্টগ্রামের (chittagong) বাস আপনারা পেয়ে যাবেন। চট্টগ্রাম (chittagong) থেকে কাপ্তাইয়ের (kaptai) জন্য আলাদা বাস ছেড়ে যায়, সেই বাসে করে আপনাকে আসতে হবে নতুন বাজার (notun bajar rangamati)।
এরপর নতুন বাজার থেকে একটি সিএনজি ভাড়া করেই আপনি ঘুরে আসতে পারেন কাপ্তাইয়ের কোল ঘেঁষে থাকা রাস্তা দিয়ে একদম রাঙামাটি (rangamati) পর্যন্ত। পাহাড় আর জলের এই অপূর্ব মিতালী দেখতে চাইলে কাপ্তাইয়ে আসতে আপনি বাধ্য!