ছোটবেলা থেকেই আমার পাহাড় বেশ পছন্দের। পানিতে আমার ভয় লাগে। যার কারনে অনেক সময় সমুদ্রে যেতে না করে দিলেও পাহাড়ে যেতে কখনোই মানা নেই পরিবার থেকেও। তাছাড়া এডভেঞ্চার ব্যাপারটা আমার সবসময়ের পছন্দের। এবার ভ্রমণে গিয়েছিলাম বাটালি পাহাড় (Batali Hills)। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্যতম একটি পর্যটন স্থান। বাটালি পাহাড় (Batali Hills) যা বাটালি হিল নামেও পরিচিত, চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রামের শহরের সর্বাধিক উঁচু পাহাড়। শোনা যায় এই পাহাড়ের চুড়া থেকে বঙ্গোপসাগর এবং চট্টগ্রাম শহরের বড় অংশ পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।
চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে এবং উচ্চতা ২৮০ ফুট। এরো একটি অদ্ভুত নাম আছে। জিলাপি পাহাড়। পাহাড়ের রাস্তা গুলো জিলাপির প্যাচের মতো বলেই এমন নাম দেওয়া। বাটালি পাহাড়ের চূড়ার আরেকটি নাম আছে। ‘শতায়ু অঙ্গন’ (Satayu Angan)। এই অঙ্গনে রোজ আরোহণ করা মানুষেরা শত বছর আয়ু লাভ করবেন সন্দেহ নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বাটালি পাহাড়ের চূড়াতেই বিমান বিধ্বংসী কামান স্থাপন করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে পাহাড়টি একবার না দেখলেই নয় আর তাই আমরাও ছুটে চললাম বাটালি পাহাড়ের উদ্দেশ্যে।
চট্টগ্রাম শহরে যেতে ঢাকা থেকে ৭ বা ৮ ঘণ্টা লেগে যায় আর যেহেতু ভ্রমণের উদ্দেশ্য পাহাড় তাই আমরা রাতের বাসে রওনা দিলাম। বরাবরের মতোই আমাদের গ্রুপ চলেছি ভ্রমণে। একসাথে বিভিন্ন জায়গায় যেতে যেতে আমাদের বেশ ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। বাসের মধ্যে সারা রাত ঘুমোতে ঘুমোতেই পার হয়ে গেল। যদিও আমি ভ্রমণের সময় ঘুমাই না। আসেপাশের রাস্তা দেখতে দেখতে যাই। মনে হয় গাছগুলো দৌড়ে পিছনের দিকে চলে যাচ্ছে। আমার মজা লাগে খুব কিন্তু পরের দিন পাহাড়ে উঠতে হবে তাই আজ ঘুমিয়ে নিলাম।
আমাদের হোটেল আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। তাই চট্টগ্রামে পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে নিলাম সবাই। নাস্তা করে ৯ টার দিকে বের হলাম পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। ইচ্ছা আছে এবার পাহাড়ের সাথে আর বেশ কিছু জায়গা ভ্রমণ করবো। চট্টগ্রাম শহরের প্রাণ কেন্দ্রে লালখান বাজার এলাকার ইস্পাহানী মোড়ের উত্তরে ফাহিম মিউজিকের পাশ ঘেঁষে এবং ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির পিছন দিয়ে পিচ ঢালা পথ বেয়ে উপরে দিকে উঠে গেছে বাটালি হিলের রাস্তা। রাস্তা ধরে হেটে এগোতে লাগলাম আমরা। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ পুলিশের সৌজন্যে এখানে প্রায় ১২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছিল। পাহাড় বলতে আমরা এবড়ো খেবড়ো কঠিন রাস্তা মনে করেছিলাম কিন্তু এই পাহাড়ে ওঠা খুবই সহজ। পিস করা রাস্তা আবার সিঁড়ির ব্যবস্থাও আছে। যারা নতুন নতুন ভ্রমণ শুরু করেছেন বেশি পরিশ্রম করে পাহাড়ে উঠতে পারবেন না বা ফ্যামিলির ছোট সদস্য নিয়ে পাহাড়ে ভ্রমণে আসতে চান তাদের জন্য বাটালি পাহাড়/ বাটালি হিলের বিকল্প নেই। গাড়ি নিয়ে ওঠা যায় কিন্তু আমরা হেটেই এগোতে লাগলাম রাস্তা দিয়ে। ঘন গাছপালা দুপাশে মাঝে সুন্দর রাস্তা। এমন রাস্তায় হেটেও আনন্দ।
একদম চূড়ায় উঠে সবাই বেশ ক্লান্ত। পানি খেয়ে চারপাশে দেখতে লাগলাম। চূড়ায় শতায়ু অঙ্গন বাধাই করে লেখা। আসেপাশে নিঃসন্দেহে মুগ্ধ হওয়ার মতো পরিবেশ। বেশ কিছুক্ষণ আসেপাশে ঘুরাঘুরি করে আবার জিলাপির প্যাচের মত রাস্তা ধরেই নামতে শুরু করলাম সবাই। বাটালি হিল থেকে আপনি সোজা সীতাকুণ্ড ও ঘুরে আসতে পারেন যাকে বলে এক ঢিলে দুই পাখি। একই শহরে হওয়ায় এক দিনে ই দুটি পাহাড় ভ্রমণ করে আসা কোনো ব্যপার ই নয়।