ক্ষুদ্র নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠী চাকমাদের জীবনযাত্রা

0
452

কলেজের এক চাকমা (Chakma) বান্ধবীর সুবাদে যাওয়া হয়েছিল তার বাড়ী খাগড়াছড়ি জেলায় । চাকমাদের সমাজ ব্যবস্থা, রীতিনীতি, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস , উৎসব আমাকে বিস্মিত করেছে । এখনো চাকমাদের মধ্যে রাজা , রাজ্য ব্যবস্থা দেখে আমি রীতিমত অবাক । উপজাতিরা খুব ই সহজ সরল প্রকৃতির । চাকমা সমাজে নিজেদেরকে বলে চাঙমা। বিভিন্ন উপজাতি নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা চাকমাদেরকে বিভিন্ন নামে ডেকে থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল বা তিন পার্বত্য জেলা তথা রাঙ্গামাটি, বান্দরবন এবং খাগড়াছড়ি জেলায় চাকমা (Chakma)সম্প্রদায় বসবাস করে তবে বর্তমানে জীবিকার তাগিদে সারা বাংলাদেশে ই চাকমারা বসবাস করে ।  চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায় ৩২ টি গুথি বা গোত্র এবং গঝা বা গোষ্ঠী রয়েছে।

সমাজ ব্যবস্থার দিক থেকে চাকমা (Chakma) সমাজ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। আগের প্রথা অনুযায়ী গর্ভবতী মহিলাকে নিজের স্বামীর ঘরে বা স্বামীর গোষ্ঠীর ঘরে সন্তান প্রসব করতে হত। পূর্বে ওঝারাই নামক ধাত্রী গর্ভবতী নারীদের সন্তান প্রসব করাতেন । এখন ঐ নিয়ম নেই।  চাকমা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ তাদের সার্কেলের প্রধানকে রাজা বলে। রাজা তাদের প্রথা, রীতি, নীতি, ভূমি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, পার্বত্য জেলা পরিষদ অধিবেশনে যোগ দেয়া, কার্বারী নিয়োগ, হেডম্যান নিয়োগের মত কাজ করে থাকে। গ্রামের কার্বারী যাবতীয় ঝগড়া, নানা সমস্যার নিষ্পত্তি করে থাকেন। হেডম্যানরা অনেক কাজ করলে ও মুল কাজ খাজনা তোলা। আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতিতে চাকমারা নেতৃত্ব-ধর্মী ভূমিকা পালন করে আসছে ব্রিটিশ অথবা পাকিস্তান আমল থেকেই। চাকমা রাজা নাম দেবা-শীষ রায়।

আমি যে সময়ে খাগড়াছড়ি গিয়েছিলাম তখন তাদের উৎসবের সময় ছিল । যথেষ্ট জামা কাপড় নেওয়া সত্বেও তাদের পোশাক আমাকে এতো টা ই আকৃষ্ট করেছিল যে আমি নিজের পোশাক ছেড়ে তাদের মতো পোশাক পড়েছিলাম । চাকমা (Chakma) নারীরা বেপন নামের একপ্রকার কোমর তাতেঁ কাপড় তৈরী করে। নারীদের পোশাকের মধ্যে আছে পিনন, খাদি ব, কাগই, পাগড়ি, আলাম । আলাম কিন্তু কোন পোশাক নয় নানা রং ও ডিজাইনের ফুলে বোনা একটি কাপড় মাত্র । মজার বেপার চাকমা নারীরা হাতির দাঁতের তৈরী গহনা ব্যবহার করেন । নাকে বেশ বর আকারের নাক-ফুল বা নোলক পড়েন ।

আরো অবাক করার বিষয় চাকমাদের (Chakma) বেশির ভাগ তৈজস পত্র কাঠ বা বাঁশের তৈরি । কলাপাতা বা আগুনে পুড়িয়ে এক ধরনের তরকারি তারা খায় যার নাম কেবাং। বাঁশ দিয়ে ও একটি খাবার তৈরি করে গাঙ নামে । চাকমা রা শুটকি এবং চিংড়ি মাছ খুব পছন্দ করে । লবণ , মরিচ , হলুদ দিয়ে মাংস পুড়িয়ে সিক্যা নামে এক ধরনের খাবার তৈরি করে । আমি সব গুলো খাবার ই একটু একটু খেয়ে দেখার চেষ্টা করেছিলাম । কিছু খাবার বেশ সুস্বাদু ।

চাকমাদের (Chakma) একটি মজার বেপার হলো ওরা ভুতে বিশ্বাস করে । চাকমাদের বেশির ভাগ মাচার উপর তৈরি ঘরে থাকে । বেশ মজার ঘর সেগুলো । মাটির ঘর ও রয়েছে অনেক । চাকমারা নিজস্ব ভাষায় কথা বলে নিজেদের মধ্যে । ৪ দিন থেকেছিলাম, বহু চেষ্টা করেও শিখতে পারি নি সে ভাষা । এদের নিজস্ব পাণ্ডুলিপি ও আছে ।

Previous articleMy Most Beautiful Experiences In Tasmania
Next articleআয় বৃষ্টি ঝেঁপে
সাদিকা পেশায় কৃষিবিজ্ঞানের স্নাতক স্তরের ছাত্রী। গোপালগঞ্জের নিবাসী সাদিকা বাংলাদেশ বিষয়ক লেখালিখির ব্যাপারে আমাদের অন্যতম বিশেষজ্ঞ। নিজের দেশের প্রতি সাদিকার গভীর ভালোবাসা তার প্রতিটা লেখায় বারবার ফুটে ওঠে। ওর লেখাপড়ার বিষয়টি মাটির খুব কাছাকাছি হওয়ায় সাদিকার সাথে গ্রামবাংলার পরিচয় গভীর, আর লেখায় মাটির টান। উনি অবসর সময়ে ঘুরতে আর লেখালিখি করতে ভালোবাসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here