সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’ পড়েছেন? সেই যে আফ্রিকার জঙ্গলের মধ্যে একটা হোটেলে গিয়েছিল সন্তু আর কাকাবাবু! ভারতের মধ্যে যদি এমন অভিজ্ঞতা পেতে চান, তাহলে চলে যান বান্ধবগড়ের জঙ্গলে। বান্ধবগড়ে অনেক হোটেল, লজ-এরও অভাব নেই। কিন্তু এসবই জঙ্গলের বাইরে। তবে জঙ্গলের মধ্যে থাকার সুযোগও আছে। সেক্ষেত্রে আপনাকে থাকতে হবে মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh) ট্যুরিজিমের ‘হোয়াইট টাইগার ফরেস্ট লজ’এ। নামে ফরেস্ট লজ হলেও আধুনিক হোটেলের সব সুবিধাই আছে। অথচ গাছপালায় ঘেরা। নির্জন গা ছমছমে। লজে দু’রকমের ঘর আছে। কিছু ঘর উঁচু পিলারের উপরে। যা ডুয়ার্সের চিলাপাতায় গাছবাড়িতে কখনও থাকলে, সেই অভিজ্ঞতা মনে পড়াবে। যদিও ফরেস্ট লজ-এর চারিদিক উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা, তবুও সন্ধ্যের পর বাইরে বেরোতে গেলে বুক ধুকপুক করে। হাজার হোক এটা তো মানুষের রাজত্ব নয়, বন্য ভয়ঙ্কর প্রাণীদের রাজত্ব।
মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh) ট্যুরিজিমই দিনের বেলা চাহিদামত সাফারির সব ব্যবস্থা করে দেয়। বান্ধবগড় সাফারি করে বাঘের দেখা পেলে ভাল। না পেলেও ক্ষতি নেই। আপনি যদি জঙ্গল প্রেমিক হন তাহলে বান্ধবগড় থেকে আপনি অপার আনন্দ আহরণ করতে পারেন। এই জঙ্গলের রূপ অনবদ্য। বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে কাশের বন, মনে হবে শরৎকালের অপু দুর্গার নিশ্চিন্দিপুর। আর পলাশগাছের বন, বসন্তে কেমন রঙ ধরে তা ভাবলেই মন ভালো হয়ে যায়। এই বনের মধ্যে অসংখ্য ময়ূর, ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ, গাছে গাছে হনুমান। আর কপাল ভাল থাকলে দেখা হয়ে যাবে বাঘের সাথে।
সাফারির পর লজে ফিরে এসে বসে থাকুন একদম শেষ প্রান্ত ক্রংক্রিট বাঁধানো চত্বরের ওপরে। তার গা ঘেঁষেই চওড়া খাল। তার ওপারেই জঙ্গল। অনেক সময় এখান থেকেই কাকর হরিণ বা বুনো শুয়োর চোখে পড়ে। দেখতে ভালই লাগে। যতক্ষণ ভাল লাগে বসে থাকুন। এরপর লজে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে নিজেকে ফুরফুরে করে নিন। এখানে খাওয়ার খরচ ঘরভাড়ার সঙ্গেই ধরা আছে। একেবারে এলাহি খাবার দাবারের ব্যাবস্থা। যা খুশি, যত খুশি খান। কিন্তু ডাইনিং হলে যখন খেতে বেরোবেন, তখন তো অন্ধকার। তাই, গাছপালায় ঘেরা পথে আবার শুরু হয় ধুকপুকুনি। ঝোপের আড়াল থেকে কেউ নজর রাখছে না তো? কেউ ওৎ পেতে বসে নেই তো? হাজার হোক, হোটেলটা জঙ্গলের মধ্যে। আর এটা ডোরাকাটাদের অবাধ রাজত্ব।