জন্মেছিলাম উত্তরে, কার্সিয়াং(Kerseong) শহরে, বাবার চাকরির সূত্রে থাকতাম তখন। হিমালয়ের কোলই তাকে বলব তাই না? তাই বোধ হয় উত্তরের হাওয়া এত টানে। পরের দিকে, এমনিতেই আমার চাকরি ও অন্যান্য পেশাদারী সূত্রে উত্তরে আনাগোনা বেড়েছে। এখন নিজেকে আমি ‘উত্তরের মেয়ে’ বলে ভাবতে ভালই লাগে। উত্তরবঙ্গ(North Bengal) এর সঙ্গে প্রাণের যোগ এখন পরিণত হয়েছে অভ্যাসে। প্রতিবারই ট্রেন যখন কিষানগঞ্জ(Kisengaunj) পেরোয়, তখন মনের মধ্যে বোধহয়, আমার নিজের কিছু যেন আবার আমার নিজের করে পাওয়ার সময় এসেছে |
ঝালংযের(Jhalong) কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে জলঢাকা(Jaldhaka) নদী। ভাল লাগছিল, খুব নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলঢাকা নদীর আঁকাবাঁকা গতিপথ। যে পথ আমাদের সঙ্গে-সঙ্গেই এগিয়ে চলেছে বিন্দুর(Bindu) দিকে। একটা সময়ে যখন ঝালংযে পৌঁছলাম সামনে জলঢাকা ব্রিজ। জলঢাকা যেন দুরন্ত গতিতে উপচে পড়ছিল। আমি নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম, আমার পা ওখানেই আটকে গেছে। জলের ওই তীব্র স্রোত এ-পর্যন্ত আমার দেখা সমস্ত অনুভূতিকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। এরপর যখন বিন্দুর উদ্দেশ্যে আবার এগোতে লাগলাম তখন, মনের মধ্যে আরো চমক তৈরি হতে লাগল, সেই সঙ্গে দ্বন্দ্বঃ আকীর্ণ অরন্য, পাহাড়ি বসতি, জীবন ও ফেলে দেওয়া বিয়ার ও মদের বোতল- পাহাড়ি পথে ছোট গ্রাম প্যারেন হয়ে ভুটান(Bhutan) সীমান্তে ভারতের(India) শেষ জনপদ বিন্দু। পথে পড়ল ঝালং-এর জলঢাকা হাইডেল পাওয়ার প্রজেক্ট। প্যারেনের(Paren) রঙিন রঙিন কাঠের ঘরবাড়ি। আর পথের ধারে কমলার বাগান। ছবির মত পাহাড়ি গ্রাম বিন্দু। বারান্দায় টব আলো করে আছে ফায়ারবল, পিটুনিয়া, গ্ল্যাডিয়োলা আর অর্কিডের ফুল। বিন্দুতে জলঢাকা ব্যারেজের ওপারে ভুটান। বাঁধের ওপর পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছে দু’একজন। কিন্তু তখনই দেখলাম, একজন ছবি তুলতে যেতেই রে রে করে কোথা থেকে বৃদ্ধ প্রহরী ছুটে এসে বাধা দিল, তার মানে ছবি তোলা যাবে না।
কোথায় থাকবেনঃ আগেই বলেছিলাম আমার গেস্ট হাউসে থাকার কথা। তবে বিন্দুতে সরকারি গেস্ট হাউসের চেয়ে বেসরকারী হোটেলের ওপরে ভরসা করাই বেশি ভাল। না,ওখানে এখনও সেরকমভাবে হোম স্টে গড়ে ওঠেনি। আর একটু দূরে ঝালং-এ থাকতে গেলে আছে সরকারী ব্যাবস্থায় তাঁবু, বেসরকারী গেস্ট হাউস ও বেসরকারী হোটেল।