ঝুলন্ত সেতু রাঙ্গামাটি

on Hanging Bridge, Rangamati, Bangladesh

Hanaging bridge Rangamati
ছোট বেলায় বর বউ খেলতাম তার সাথে। আমি শাড়ি পড়তাম মায়ের ওড়না দিয়ে আর সে পাঞ্জাবি তারপর সে বর হতো আর আমি বউ। পাতায় রান্না করে খাবার বেড়ে দিতাম, আবার পাতা দিয়েই টাকা বানাতাম। বেশ ছিল দিনগুলো। একদিন বড় একটা গাড়ি এসে থামল তার বাড়ির সামনে। আমি একটুও কাঁদিনি , সে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল বাবার বদলি হয়ে গেছে। আমরা রাঙ্গামাটি (rangamati) চলে যাচ্ছি। আমি শুধু তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখেছিলাম। 

তারপর কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর, দেখা হয়নি তার সাথে। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। এক মুহূর্তে ঠিক করে নিলাম তাকে খুঁজতে বের হবো। যদিও তার মুখটা কেমন হয়েছে আমি জানি না কিন্তু খুঁজতে তো ক্ষতি নেই। যেই ভাবা সেই কাজ!

আজ রাঙামাটি যাচ্ছি। তার বাবা ডাক বিভাগে চাকরি করতো। আগে রাঙ্গামাটি পোস্ট অফিসে খোজ নিতে হবে, তারপর সেখানকার কলেজে যেহেতু আমি মাত্র স্নাতক শুরু করেছি সেও নিশ্চই সদ্য কলেজ ছেড়েছে। কতো শত পরিকল্পনা নিয়ে নিউমার্কেট কলাবাগান থেকে রাঙ্গামাটির (rangamati) বাস ধরলাম। সারা বাসেই হাজারো পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে পরেছি।

ঘুম ভেঙ্গে পাশের একজন কে জিজ্ঞাসা করতে বলল আর ১ ঘণ্টার মধ্যে বাস রাঙ্গামাটি (rangamati) পৌঁছাবে। অবশেষে বাস থেকে নামলাম এবার থাকার জায়গা খুঁজতে হবে আগে। রাঙ্গামাটি (rangamati) পুরাতন বাস স্ট্যান্ডের আর রিজার্ভ বাজার নামে এক এলাকায় নাকি ভাল হোটেল আছে থাকার জন্য এক বন্ধুর থেকে শুনে এসেছিলাম। যা হোক ভিতরে অন্য তাড়না থাকলেও কাপ্তাই লেকের পাশে হোটেল পাওয়াতে যেন চিন্তা হারিয়ে ফেলেছি। লেকের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম! আর সাথে লেকের ঠাণ্ডা বাতাস।

ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে পড়লাম পোস্ট অফিসের উদ্দেশ্যে।  সেখানে গিয়ে জানতে পারালাম আরো ৪ বছর আগে তিনি আবার বদলি হয়েছেন। তার মানে কলেজে গিয়েও লাভ নেই কিন্তু স্কুল! কিন্তু আমি তো তার নাম টা ছাড়া কিছুই জানি না। নাম্বার আছে কিনা যোগাযোগ করার মত জানতে চাইলে অফিস সহকারী অনেক খুঁজে একটা নাম্বার টুকে দিল। তাকে কিছু টাকা দিয়ে ফিরে এলাম। একটা শহরে কতো স্কুল থাকে… কোনটা তে খুঁজবো!

এতো হতাশ হলাম যে মনে হচ্ছিল আমার পা চলছে না । কেউ টেনে ধরেছে পিছন থেকে। হঠাৎ মনে হলো রাঙ্গামাটি যেহেতু এলাম ঝুলন্ত সেতুটা (hanging bridge) দেখে ফিরে যাব।

শুনেছিলাম এখানে রয়েছে ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ মনোহরা ঝুলন্ত সেতু । এ সেতু ইতি মধ্যে ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ঝুলন্ত সেতু বা সাসপেনশন সেতু একটি সেতু যার একটি ডেক (ভারবহনের অংশ) সেতুর দুই প্রান্তের স্তম্ভের মধ্যে ঝুলন্ত ধাতব মোটা তারের সঙ্গে উল্লম্ব সাসপেনশন তারের নিচে নিক্ষিপ্ত হয়। এই ধরনের সেতুর প্রথম আধুনিক উদাহরণটি ১৮ শতকের প্রথম দিকে নির্মিত হয়েছিল। সহজ সাসপেনশন সেতু, যার উল্লম্ব পতন রোধকারীর অভাব রয়েছে, বিশ্বের অনেক পাহাড়ি অংশে এই সব সেতুর ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

এই ধরনের সেতুর টাওয়ারের মধ্যে সোপান-যুক্ত স্লট রয়েছে, পাশাপাশি উল্লম্ব সাসপেন্ডর তারগুলি যা নিচে ডেকের ওজন বহন করে, যার উপর দিয়ে চলাচল। নিউ ইয়র্ক সিটিতে ম্যানহাটন ও ব্রুকলিনকে যুক্ত করেছে ম্যানহাটন ব্রিজ আর বাংলাদেশে শুধুমাত্র রাঙ্গামাটিতেই (rangamati) দেখা যায় এমন সেতু।

আমি যখন সেতুর কাছাকাছি পৌছুলাম প্রায় সন্ধ্যা। কর্পোরেশনকে ৫ টাকা দিয়ে ঢুকতে হয় সেখানে। সেতুর উপর যখন হাঁটছিলাম সেটা কাঁপছিল। রোমাঞ্চকর অনুভূতি। ঠিক মাঝামাঝি আসার পর মনে হল এতো সুন্দর দৃশ্য আমি জীবনে কখনো দেখিনি। কাপ্তাই হ্রদের (kaptai dam) সৌন্দর্য, আদিবাসীদের ক্ষয়িষ্ণু জীবনযাপন যেন সমস্ত মুগ্ধতা কেড়ে নিতে চায়। সেতুটি দুইটি পাহাড়ের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করেছে। তাছাড়াও পার্ক, পিকনিক স্পট, নৌ-যান, শত মানুষের আনাগোনা আর অবশেষে সেতুর ঠিক মাঝে দাঁড়িয়ে কুয়াশায় ঢেকে যেতে দেখলাম রাঙ্গামাটি শহর।

নাহ মন খারাপ করে ফিরতে হল না রাঙ্গামাটি থেকে ভাবতেই হেসে ফেললাম আনমনে
Previous articleমালনীছড়া চা বাগান , সিলেট
Next articleময়নামতি, কুমিল্লা
সাদিকা পেশায় কৃষিবিজ্ঞানের স্নাতক স্তরের ছাত্রী। গোপালগঞ্জের নিবাসী সাদিকা বাংলাদেশ বিষয়ক লেখালিখির ব্যাপারে আমাদের অন্যতম বিশেষজ্ঞ। নিজের দেশের প্রতি সাদিকার গভীর ভালোবাসা তার প্রতিটা লেখায় বারবার ফুটে ওঠে। ওর লেখাপড়ার বিষয়টি মাটির খুব কাছাকাছি হওয়ায় সাদিকার সাথে গ্রামবাংলার পরিচয় গভীর, আর লেখায় মাটির টান। উনি অবসর সময়ে ঘুরতে আর লেখালিখি করতে ভালোবাসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here