নিঝুম দ্বীপ (nijhum dwip) বাংলাদেশের নোয়াখালীর (noakhali Bangladesh) অন্তর্গত হাতিয়া (hatia) উপজেলার একটি দ্বীপ। চর আসমানি (asmani char), বালুয়ার চর (baluar char) বা সোনালী দ্বীপ (sonali dwip) নামেও পরিচিত এই জায়গাটি আসলে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠেছিল। নিঝুম দ্বীপ (nijhum dwip) নামে সমধিক পরিচিত এই জায়গার নামের অর্থ হচ্ছে যে দ্বীপটি খুবই নির্জন ও চুপচাপ।
১৪,০৫০ একর জায়গা নিয়ে মেঘনা নদীর মোহনায় এই দ্বীপটি জেগে ওঠে ১৯৪০ সালের দিকে। সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা প্রথম এই দ্বীপটির খোঁজ পায় এবং এখানে ঘর বেঁধে বসবাস শুরু করে। ১৯৮০ সালের দিকে এই দ্বীপটির নামকরণ করা হয় নিঝুম দ্বীপ (nijhum dwip)। বর্তমানে পুরো দ্বীপের পাঁচ ভাগের এক ভাগ অংশে মানুষের বসবাস এবং বাকি অংশে গড়ে উঠেছে চমৎকার এক ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট।
নিঝুম দ্বীপটি (nijhum dwip) মূলত চারটি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত। বল্লার চর (ballar char), কমলার চর (kamalar char), চর ওসমান (char osman) ও চর মুরি (char muri) নিয়ে গড়ে ওঠা এই দ্বীপটিতে প্রচুর পরিমাণে শীতের পাখি আপনি দেখতে পাবেন।
লেঞ্জা, সরালি, রাঙামুরি, জিরিয়া, বাতান ইত্যাদি নানা জাতের পাখির দেখা এখানে পাওয়া যাবে। এছাড়া প্রায় ৩৫ জাতের পাখির বসবাস এ জায়গাটিতে। পাখিদের পাশাপাশি হরিণ, বানর, শেয়াল, বুনো শুকর এবং নানা জাতের সাপের দেখাও এখানে মিলবে। যারা ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য অত্যন্ত চমৎকার এক স্থান এই নিঝুম দ্বীপ (nijhum dwip)।
প্রায় চল্লিশ হাজার হরিণের বসবাস এই দ্বীপটিতে। যারা এখানে ক্যাম্পিং করেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে টেন্টের থেকে বেরোলেই সাথে সাথে একদম কাছে হরিণের চলাফেরা এখানের মোটামুটি স্বাভাবিক একটি ঘটনা। চাইলে স্থানীয় গাইডদের সহায়তা নিয়ে আপনি আরো দারুণভাবে নানা জাতের পাখি ও হরিণের একদম কাছাকাছি যেতে পারবেন।
আপনি যদি একদম সত্যিকারের একজন প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে নিঝুম দ্বীপ (nijhum dwip) আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। এই দ্বীপটি এখনো পর্যন্ত নিজের স্বকীয়তা সম্পূর্ণরূপে বজায় রেখেছে। প্রতি বছর খুবই কম সংখ্যক ট্যুরিস্ট এ জায়গাটিতে আসায় দ্বীপটি বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। প্রকৃতির এত বৈচিত্র্য যে একটিমাত্র জায়গাতেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব সেটি নিঝুম দ্বীপকে না দেখলে কেউই বিশ্বাস করতে চাইবেনা।
নিঝুম দ্বীপের (nijhum dwip) সবচাইতে সুন্দর কোন জায়গাগুলোতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সে সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি। কমলার চর (kamalar char) হলো নিঝুম দ্বীপের এমন একটি জায়গা যেটি কিনা ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত। ইলিশ (hilsa) বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। আপনি এখানে এলেই দেখবেন জেলেরা অনেক ঘটা করে কমলার খাল (kamalar khal) থেকে ইলিশ মাছ ধরছে। ইলিশের পাশাপাশি এই কমলার চরের প্রাকৃতিক পরিবেশও বেশ পরিস্কার ও আকর্ষণীয়।
এরপরই চলে আসবে চৌধুরি খাল (chowdhury khal) ও কবিরাজ চরের (kabiraj char) কথা। সন্ধ্যার দিকে যদি আপনি এইদিকে যান তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় প্রচুর পরিমাণে হরিণ দেখতে পাবেন। চৌধুরি খালের (chowdhury khal) আশেপাশে হরিণ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি। ইঞ্জিন বোটে করে ঘুরে বেড়াতে পারেন এই খালটি। এই জায়গা থেকে সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতিই আলাদা।
বাংলাদেশ সরকারের বনসম্পর্কিত প্রজেক্টের অংশ হিসেবে নিঝুম দ্বীপে একটি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (nijhum dwip national park) গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় গাইডদের সাথে নিয়ে আপনিও হারিয়ে যেতে পারেন এই বনাঞ্চলের গহীনে। নিজে থেকে এই কাজটি না করতে যাওয়াই উত্তম কেননা তাতে করে বনের মাঝে আক্ষরিক অর্থেই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল!
এই জায়গাগুলো ছাড়াও ঘুরে দেখতে পারেন নামার বাজার সমুদ্র সৈকত এবং দোমার চর (domar char)। নৌকা ভাড়া করে চলে যেতে পারেন ঢাল চর এবং চর কুকরি-মুকরি (char kukri mukri)। পাখিদের দেখা পেতে চাইলে হালকা রঙের কাপড় পরে নিঃশব্দে চলে যেতে পারেন বনের গহীনে।
ঢাকা (dhaka) থেকে নিঝুম দ্বীপ (nijhum dwip) যাওয়ার সবচাইতে সহজ উপায় হলো সদরঘাট (sadarghat) থেকে লঞ্চে করে একেবারে হাতিয়া (hatia) চলে যাওয়া। তমুরুদ্দি ঘাটে (tamuruddi ghat) লঞ্চ থেকে নেমে ইঞ্জিন নৌকায় করে চলে যেতে পারেন নামার বাজার যেখান থেকেই আপনার নিঝুম দ্বীপের (nijhum dwip) শুরু। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা আছে বেশ। থাকার জন্য নানা মানের হোটেলের খোঁজ আপনি এখানে পাবেন।
[display-map id='2575']
নিঝুম দ্বীপ (nijhum dwip) ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ একটি স্থান। নিজের ক্যাম্পিং গিয়ার না থাকলেও নামার বাজার থেকেই সবকিছু ভারা করে সহজেই ক্যাম্পিং করতে পারবেন আপনি। দৃষ্টিনন্দন চিত্রা হরিণ আর হাজারো পাখির ডাকে হারিয়ে যেতে চলে যেতে নিঝুম দ্বীপ!