সুন্দরবন (sundarban) পৃথিবীর সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (largest mangrove forest of the world) বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। এ বনে অধিক পরিমাণে পাওয়া সুন্দরি বৃক্ষের জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে সুন্দরবন (sundarban)। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে সুন্দবনকে নিজেদের বুকে জায়গা দিয়ে রেখেছে।
প্রায় দশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের (10,000 sq. km) সুন্দরবনের ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারের অবস্থান বাংলাদেশে (60%)। এ দেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালি, বরগুনা ও বাগেরহাট জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই বিস্তৃত বনাঞ্চলকে ইউনেস্কো (UNESCO) ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
প্রতি বছরই নানান রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নিজের বুক পাতিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের (Bangladesh) উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করে চলেছে এই বনাঞ্চলটি।
আপনার সুন্দরবন (sundarban) যাত্রাটি শুরু হতে পারে পশুর নদী (pashur river) থেকে। সেক্ষেত্রে যাত্রা শুরুর খানিক পরেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে সুন্দরবনের সারি সারি গাছপালা। ভালমত পানির দিকে খেয়াল করলে মাঝেমাঝে ইরাবতী ডলফিনও চোখে পড়ে যেতে পারে।
এদিক থেকে সুন্দরবনে (sundarban) ঢুকলে আপনার প্রথম গন্তব্য হবে করমজল (karamjal)। করমজলে পৌঁছতে কীরকম সময় লাগবে সেটি জোয়ার – ভাটার উপর নির্ভর করে। তবে ভাটার সময় গেলে একটু তাড়াতাড়িই যেতে পারবেন।
করমজল ঘাটে নামার পর আপনাকে ভেতরে ঢুকতে হবে। এ জায়গাটি মূলত কুমির ও হরিণ প্রজনন কেন্দ্র। অনেক ছোট ছোট কুমিরের বাচ্চাকে নিজ চোখে দেখতে পারবেন এখানে। প্রজনন কেন্দ্র পেরিয়ে ঢুকতে হবে গা ছমছমে বনের ভেতর।
বনের ভেতরের রাস্তাটি মাটি থেকে বেশ খানিকটা উপরে মাচা করে বানানো। যাত্রাপথে অগণিত বানর ও তাদের পরিবার আপনার চোখে পড়বে। সেইসাথে কানে ভেসে আসবে বহু নাম না জানা পাখির বিচিত্র কোলাহল।
বহু মানুষের সুন্দরবন (sundarban) যাওয়ার ইচ্ছের পেছনে থাকে অন্তত একটিবার হলেও নিজ চোখে রয়েল বেঙ্গল টাইগার (royal bengal tiger) দেখতে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। তবে তার দেখা কি আর সহজে মেলে? তবুও কিছু কিছু জায়গায় বাঘের আনাগোনা একটু বেশিই। নিরাপদে বাঘ দেখবার জন্য সুন্দরবনের (sundarban) কটকা অভয়ারণ্য একটি চমৎকার জায়গা। প্রায়শই এখান থেকে দেখা মিলতে পারে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের।
এছাড়াও কটকাতে রয়েছে একটি ছোটখাটো সমুদ্র সৈকত। তাই যারা একইসাথে বাঘ দেখার সুযোগ পেতে চান এবং সুন্দরবনের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য শরণখোলা রেঞ্জের (sharankhola range) কটকা (katka) হতে পারে একটি জুতসই পছন্দ।
এ জায়গাগুলো ছাড়াও প্রতিবছর বন বিভাগের নির্দিষ্ট ট্যুর স্পটের বাইরে অবস্থিত দুবলার চরে যেতে দেখা যায় বহু পর্যটককে। এই চরটি সুন্দরবনের (sundarban) জেলেদের মৌসুমী বসতি। এই চরে যেতে পারলে আপনার চোখে পড়বে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরার মহাযজ্ঞ।
এছাড়াও সেখানকার জেলেদের কষ্টের জীবনটাকে একদম কাছে থেকে দেখবার অভিজ্ঞতাও হয়ে যাবে আপনার। প্রতি বছরই এখানে রাসমেলা নামে একটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে এই রাসমেলা একটি অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে কাজ করে। প্রায় লাখো মানুষের সমাগম হয়ে থাকে এ সময়ে।
সুন্দরবন (sundarban) সম্ভবত বাংলাদেশের সবচাইতে বেশি জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা। প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ১২০ প্রজাতির মাছ, ৩৫টি সরীসৃপ ও ৮টি উভচর প্রাণীর খোঁজ পাওয়া যায় এই সুন্দরবনে।
সুন্দরবনে (sundarban) ভ্রমণের জন্য কিন্তু বেশ সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সবসময় সাথে সুপেয় পানি রাখা দরকার কেননা সুন্দরবনের ভেতর পুরোটাই লোনা পানি, সহজে কোথাও খাওয়ার পানি মিলবে না। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামাদি এবং দক্ষ ট্যুর অপারেটর থাকাটাও বেশ জরুরি। শীতকাল সুন্দরবন (sundarban) ভ্রমণের সেরা সময়। তবে শীতকালে ঠান্ডার প্রকোপ এড়াতে সাথে বেশ কিছু গরম জামা রাখুন কেননা উপকূলীয় অঞ্চলে শীতের মাত্রাটা অত্যধিক বেশি।
সুন্দরবন (sundarban) যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে ঢাকা (dhaka) থেকে খুলনা (khulna) যেতে হবে। সড়কপথই এক্ষেত্রে সবচাইতে নির্ভরযোগ্য উপায়। খুলনা থেকে আপনাকে যেতে হবে ৫০ কিলোমিটার দূরের মংলায় (mangla)।
মংলা থেকে ট্রলার বা ইঞ্জিন বোট ভাড়া নিয়ে পশুর নদীর উপর দিয়ে চলে যেতে পারবেন সুন্দরবন। তবে সুন্দরবনের (sundarban) ক্ষেত্রে নিজেরা সবকিছু গুছিয়ে যাওয়ার থেকে কোন ভাল ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে যাওয়াটাই খরচ ও শ্রম উভয়ই বাঁচাতে পারবে বলে ধারণা করা হয়। আশা করি এই সবুজ অবিরাম বৃক্ষরাজির মাঝে হারিয়ে যেতে ভালোবাসবেন আপনিও!