সহজ ভাষায় বলতে গেলে ঢাকা (Dhaka) মহানগরীর পুরনো অংশটিকেই পুরান ঢাকা (old Dhaka) নামে ডাকা হয়ে থাকে। ভিন্ন ধারার সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করা এই এলাকার মানুষদেরকে সহজেই অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলা যায়। লোভনীয় খাবার, সরু গলি, ঘিঞ্জি বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য – এ সব কিছু মিলে পুরান ঢাকা গড়ে তুলেছে নিজের স্বতন্ত্র একটি পরিচয় ও ইতিহাস। ঢাকায় এলে মানুষ আর যাই হোক না কেন, পুরান ঢাকায় (old Dhaka) একবার ঢুঁ না মেরে ফেরে না।
ধারণা করা হয় প্রাচীনকালে পুরান ঢাকা (old Dhaka) অনেক সাজানো গোছানো একটি এলাকা ছিল। মুঘল শাসন শেষ হবার পর থেকে এই শহরের সুশ্রীভাব কমতে শুরু করে। তবে যে যাই বলুক না কেন, পুরান ঢাকার ঢুকলেই যেই আলাদা রকমের একটি অনুভূতি কাজ করে সেটি আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।
পুরান ঢাকার সবচাইতে চমৎকার ব্যাপারটি হলো এখানকার খাবার–দাবার। হাজীর বিরিয়ানী, কলকাতা কাচ্চি, বিউটি লাচ্ছি, বিসমিল্লাহ কাবাব সহ আরও নানা রকমের মুখরোচক খাবার পাওয়া যাবে একমাত্র এই পুরান ঢাকাতেই। বাংলাদেশের বহু ট্যুর কোম্পানি আজকাল পুরান ঢাকায় ফুড ট্যুরের ব্যবস্থাও রাখছে।
শুধুমাত্র মুখরোচক খাবারগুলোর স্বাদ নিতেই সম্ভবত আপনার এক সপ্তাহ পার হয়ে যাবে! এছাড়া মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সিয়াম সাধনার মাস রমজানে পুরান ঢাকার (old Dhaka) চকবাজারে দেশের সবচাইতে বড় ও ঐতিহাসিক ইফতার বাজার বসে। বলে রাখা ভাল, এই চকবাজারের ইফতার উপর একটি ডকুমেন্টারি বানিয়ে আমি ২০১৯ সালে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার আয়োজন করা একটি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করি! এজন্য পুরান ঢাকার সাথে আমার সম্পর্কটাই একটু অন্যরকমের।
ঘুরে দেখবার জন্য পুরান ঢাকায় ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন জায়গা রয়েছে প্রচুর। লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, হোসাইনি দালান, আর্মেনিয়ান চার্চ, বিউটি বোর্ডিং – এই জায়গাগুলো যুগে যুগে মানুষদেরকে টেনে নিয়ে এসেছে পুরান ঢাকায় (old Dhaka)।
লালবাগ কেল্লা হলো বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ। আহসান মঞ্জিল ব্যবহৃত হত প্রাচীন নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ হিসেবে। বর্তমানে এই স্থানটিতে একটি জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে। সতেরশো শতকে নির্মিত হোসাইনি দালান বা ইমামবাড়া শিয়াপন্থী মুসলিমদের জন্য এক পবিত্র জায়গা।
চারশো বছর পুরনো আর্মেনিয়ায়ন চার্চও (armenian church) পুরান ঢাকার (old Dhaka) গুরুত্বপূর্ন একটি স্থান। আরমানিটোলায় আপনি পাবেন আঠারো শতকের নিদর্শন তারা মসজিদ। ঘুরে দেখা যেতে পারে বুড়িগঙ্গা নদী, নৌকা নিয়ে যেখানে আপনি ঘুরতে পারেন খানিকক্ষণ, দেখতে পারেন একটি ঢাকাইয়া সূর্যাস্ত।
চারশো বছর পুরনো আর্মেনিয়ায়ন চার্চও (armenian church) পুরান ঢাকার (old Dhaka) গুরুত্বপূর্ন একটি স্থান। আরমানিটোলায় আপনি পাবেন আঠারো শতকের নিদর্শন তারা মসজিদ। ঘুরে দেখা যেতে পারে বুড়িগঙ্গা নদী, নৌকা নিয়ে যেখানে আপনি ঘুরতে পারেন খানিকক্ষণ, দেখতে পারেন একটি ঢাকাইয়া সূর্যাস্ত।
একটু কষ্ট করার ইচ্ছে থাকলে আপনি পায়ে হেঁটেই এই জায়গাগুলোর একটি থেকে আরেকটিতে চলে যেতে পারেন। এতে করে একইসাথে পুরান ঢাকার (old Dhaka) মানুষের ভিড়েও আপনি মিশে যেতে পারবেন, আবার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যেও পৌঁছে যাওয়া যাবে।
এবারে আসা যাক পুরান ঢাকায় বসবাসরত মানুষদের কথা নিয়ে। স্বভাবগত ভাবেই এই এলাকার মানুষেরা সবসময় একতার পরিচয় দিয়ে থাকে। সব রকমের বিপদেআপদে সবাই সবার পাশে দাঁড়ায়। পুরান ঢাকার মানুষ অত্যন্ত আমুদে ও ফূর্তিবাজ। কোন একটি উপলক্ষ পেলেই সবাই মিলে একসাথে উদযাপন করার ব্যাপারটি প্রাচীনকাল থেকেই তাদের মাঝে চলে আসছে। আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে পুরান ঢাকার ভাষাটি বাংলা ভাষায় একটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।
মানুষ আদর করে এ ভাষাটিকে ঢাকাইয়া ভাষা বলে থাকে। নানারকমের উৎসব – পার্বন নিয়ে পুরান ঢাকা সবসময়ই সদা চঞ্চল। প্রতি বছর জানুয়ারিতে এখানে সাকরাইন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পৌষসংক্রান্তি বা ঘুড়ি উৎসব নামেও এই উৎসবটি সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত। এ সময়টাতে প্রতিটি বাড়ির ছাদ সাজানো হয়ে থাকে। চারিদিকে বাজতে থাকে গান আর আকাশে ওড়ে ঘুড়ি।
এছাড়া হোলি উৎসবও এলাকার মানুষ জমজমাট ভাবে আয়োজন করে থাকে। পুরান ঢাকার (old Dhaka) বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো খুবই জাঁকজমকপূর্ণ হয়। নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে থাকে পুরো বিয়েবাড়ি।
পুরান ঢাকাকে (old Dhaka) নিয়ে কেচ্ছাকাহিনী বলা শুরু করলে তা হয়তো সারা দিনেও আর শেষ হবেনা। আজকাল যারাই বাংলাদেশ ভ্রমণে আসে অন্তত একবার হলেও পুরান ঢাকাকে ঘুরে ফিরে দেখে। এক ভিন্ন রকমের সমাজ ও পরিবেশের আনন্দ উপভোগ করতে পুরান ঢাকার চাইতে চমৎকার কোন স্থান বাংলাদেশে হয়তো আর নেই!