চারিদিকে কত লোক ব্যাগ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে।দেখি জগৎ আঙ্কেল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা আমাদের জিনিসপত্র নিয়ে জগৎ আঙ্কেলের গাড়িতে উঠলাম। জগৎ আঙ্কেল আমাদের সিমলা ঘোরাবে। আমরা সবাই হোটেলে পৌঁছালাম। স্নান করে লাঞ্চ খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আমরা বিকেলে সিমলা শহর ঘুরতে বের হলাম। প্রথমে গেলাম সিমলা কালীবাড়ি(Shimla Kalibari)। অনেক উঁচুতে সিমলা কালীবাড়ি। আমি তো ফটাফট উপরে উঠে যাচ্ছি। কিন্তু বাবা ও মা উঠতে গিয়ে হাঁফিয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে বাবা-মা উঠল। তারপর আমরা তিনজন কালীবাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। মন্দিরের ভেতরে কালী ঠাকুরের প্রতিমা। বারান্দায় ঘন্টা ঝুলছে। তখন সন্ধ্যারতি হচ্ছিল। কালীবাড়ি থেকে সিমলা শহরটা দেখতে খুব সুন্দর লাগে। চারিদিকে আলো ঝলমলে। অনেকক্ষণ বেঞ্চিতে বসে এই সুন্দর দৃশ্য দেখতে লাগলাম। তারপর কালী ঠাকুরকে প্রণাম করে নীচে খেতে গেলাম। মন্দিরের ভেতরেই খাওয়ার ব্যবস্থা। আমিষ, নিরামিষ সবই আছে। বাবা খাবার অর্ডার দিল। তারপর এক কাকু খাবার দিয়ে গেল। আমরা নিরামিষ খেয়েছিলাম। তারপর মন্দির থেকে বেরিয়ে আস্তে আস্তে নীচের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। নীচে রাস্তায় জগৎ আঙ্কেল গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। গাড়িতে উঠে সোজা হোটেল। গরম জলে হাতমুখ পরিষ্কার করে কম্বল মুড়ি দিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি।
গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি চলছে। পথে একটা হোটেলে লাঞ্চ খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। জগৎ আঙ্কেল খুব ভালো। মজার মজার কথা বলে। জগৎ আঙ্কেলের বাড়িতে আমার বয়সী এক মেয়ে আছে। এবার চলেছি ভাইসরিগেল লজ। বিরাট প্রাসাদ। ব্রিটিশ আমলে তৈরি। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। কী সুন্দর ফুলের বাগান। সাজানো-গোছানো। অনেক ছবি তুললাম। বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাবার কাছে এই প্ল্যালেসের গল্প শুনছিলাম। ইংরেজরা গরমকালে সিমলা থেকে দেশ চালনা করতো। সেইজন্য এই প্ল্যালেস তৈরি করা হয়। নাম ভাইসরিগেল লজ। এখন এখানে গবেষণা করা হয়। এক বড়ো টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। মা বলল, এই টেবিলে বসেই নাকি ভারত(India), পাকিস্তান(Pakistan) ভাগের ম্যাপ তৈরি হয়েছিল। মনটা কেমন করে উঠল। আমার মন খারাপ দেখে বাবা বাইরে এসে আইসক্রিম খাওয়ালো। বাবা জানে আইসক্রিম খেলে আমার মন ভালো হয়ে যায়। আমি খুব খুশী হলাম।
এবার আমরা যাব ঝাকু টেম্পল, ওটা একটা হনুমান মন্দির। অনেক সিড়ি পেরিয়ে মন্দিরে যেতে হয়। ভগবান হনুমানের বিরাট উঁচু মূর্তি। মাথা তুলে দেখতে হয়। জগৎ আঙ্কেল আমাকে হনুমান ঠাকুরের কাছে নিয়ে গেল। প্রণাম করে ঠাকুরমশাইয়ের কাছ থেকে হাত পেতে প্রসাদ নিলাম। এই মন্দিরে অনেক হনুমান আছে। আমাদের এখানকার মতো হনুমান নয়। মুখ-হাত কালো নয়, লালচে। হনুমানগুলো মন্দিরের চাতালে, গাছের ডালে লাফালাফি করছে। আমাদের একদম কাছে চলে আসছে। আমি তো ভয়ে বাবাকে জড়িয়ে আছি। মাও হনুমান দেখলে ভয় পায়। ছোট বেলায় মাকে একবার একটা হনুমান ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল। পড়ে গিয়ে মার হাত ভেঙে গিয়েছিল। আমি ভাবছি, ঠাকুরমশাই আমাকে যে প্রসাদ দিয়েছেন তা যেন হনুমানে খেয়ে না নেয়। আর তখনই একটা হনুমান গাছ থেকে ঝুপ করে নেমে জগৎ আঙ্কেলের জুতোজোড়া নিয়ে পালাল মন্দিরের চাতালে। মা তাড়াতাড়ি আমার জুতো সরিয়ে ফেলল। মহা মুশকিল। কী করা যায়। বাবা তখন মন্দিরের পাশের এক দোকান থেকে এক প্যাকেট ছোলা কিনে প্যাকেটটি হনুমানটি দেখিয়ে ইসারা করতে লাগল। প্রথমে হনুমানটি পাত্তাই দিচ্ছিল না। জগৎ আঙ্কেল তো বারবার হাত জোড় করছে। কিছুক্ষণ পর জুতো ফেলে দিয়ে ছোলা নিতে হনুমান নীচে নেমে আসল। জগৎ আঙ্কেল সেই ফাঁকে মন্দিরের চাতালে উঠে জুতো উদ্ধার করল। অন্ধকার হয়ে এলো। সিমলা শহরের চারিদিকে আলো। মন্দির থেকে দারুণ লাগছিল। আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসলাম। দূর থেকে হনুমান ঠাকুরকে ভক্তিভরে প্রণাম করে গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি চলল সিমলা বাজারে। একটা পাঞ্জাবী হোটেলে ডিনার খেয়ে চললাম হোটেলের দিকে। কাল সকালে সিমলাকে বিদায় জানিয়ে যাব আর এক নতুন পাহাড়ী শহর — মানালি(Manali)। সেই গল্প অন্যদিন বলবো।